অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইসলামের জন্য শেখ হাসিনা সরকার যা করেছে তা আর কেউ করেনি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, দেশে বঙ্গবন্ধুর পরে ইসলামের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন শেখ হাসিনা।
রবিবার সকালে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমিতে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর অনেকে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেছে কিন্তু কোনো কাজ করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ করেছেন। পৃথিবীর কোনো মুসলিম দেশে একসাথে একশ’ মসজিদ নির্মাণের নজির নেই। আমাদের সম্পদ সীমিত, তারপরও হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এসব মসজিদ করেছেন। শেখ হাসিনা ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে এসব কাজ করেছেন।
হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু ইসলামি শিক্ষার প্রসারে ইসলামি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। আজকে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে যে জায়গায় বিশ্ব ইজতেমা হয়, সেই জায়গা বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন। কাকরাইল মসজিদের জায়গা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন। তিনি মাদরাসা শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এ দেশকে জঙ্গিবাদের চারণভূমি বানিয়েছিল বিএনপি। দেশের মানুষের মনে তারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ভীতির সঞ্চার করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই জঙ্গিবাদকে এ দেশ থেকে নির্মূল করেছেন।
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, আজকে মাদকের কারণে দেশের তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু এই মদ, জুয়া ও হাউজি দেশ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ইসলামের ধ্বজাধারী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর দেশে মদ, জুয়া ও হাউজি খেলার অনুমতি দিয়েছিলেন। এরা মুখে ধর্মের কথা বলে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের প্রচলন করেছিলন। ১৯৭৭ সালে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মেলা ও প্রদর্শনীর নামে জুয়া ও হাউজি চালু করেছিলেন।
হানিফ বলেন, ফিলিস্তিনের নিরপরাধ, নিষ্পাপ, নিরীহ শিশু ও নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। এতে পৃথিবীর প্রায় সকল মুসলিম দেশ প্রতিবাদ করছে, দোয়া-প্রার্থনা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। যে বিএনপি মুখে ইসলামের নীতি দেখিয়ে কথা বলেছে অথচ তারা বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য একটা বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি। কারণ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিবৃতি দিলে তাদের বিদেশি প্রভু অখুশি হতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাশক্তিদের তোয়াক্কা না করে যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলেছেন, প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন হয়েছে। জাতিসংঘকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ বিএনপি একটা প্রতিবাদ, বিবৃতি দিতে পারেনি। এটাই ধর্মের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
জামায়াতে ইসলামী মানুষকে ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। এ ধর্ম সত্যের প্রতীক, জ্ঞান ও শান্তির প্রতীক। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আমাদের ধর্ম সমর্থন করে না। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে ব্যবহার করেছিল রাজনৈতিক স্বার্থে। ধর্মের কথা বলে নারী নির্যাতন, ঘর-বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করেছে। তারা দেশ ও ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। দলের নামের সঙ্গে ইসলাম ব্যবহার করে দেশের মানুষকে ধোঁকা দেয়। এরা ইসলামিক দল নয়, ধর্মীয় দল নয় বরং তারা রাজনৈতিক দল। এদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
অবিলম্বে ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে হানিফ বলেন, নিরীহ নারী, নিষ্পাপ শিশু নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। নিষ্ঠুর, নৃশংসভাবে মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে। যারা কথায় কথায় মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, উপদেশ দেন সেই বিশ্ব নেতারা আজ শুধু নিশ্চুপই নয় বরং হত্যাকারীদের পক্ষে সাফাই গাইছে। অবিলম্বে এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচারের দাবি জানাই।
দেশ ও জাতির কল্যাণে দেশের আলেম সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশে তরুণ সমাজের নীতি-নৈতিকতার চরম বিপর্যয় ঘটেছে। আলেম সম্প্রদায়ই পারেন ঈমান ও আকিদার প্রচার করে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে।
কুষ্টিয়া নাগরিক পরিষদের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. হেলালউজ্জামান, কুওয়াতুল ইসলাম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ তারিকুর রহমান, দি কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির নবনির্বাচিত সভাপতি মো. জাফর মোল্লা, নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদ জালাল।
Leave a Reply